২০২৫ সালের জুলাই থেকে ঢাকায় চালু হচ্ছে ৪০০টি রুটভিত্তিক ইলেকট্রিক বাস। জানুন রুট, টিকিটিং সিস্টেম, চার্জিং স্টেশন, পরিবেশগত সুফল ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জসহ সব বিস্তারিত।
ঢাকায় চালু হচ্ছে
রুটভিত্তিক আধুনিক ইলেকট্রিক বাস পরিষেবা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানী
একটি পরিবেশবান্ধব, সময়ানুগ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীর যানজট ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বহু উদ্যোগ নেয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় ইলেক্ট্রিক বাস আনার পরিকল্পনার কথা জানান দেয় তৎকালিন সরকার।
এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ২১৩৫
কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ৩৬৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ
(ডিটিসিএ)। সময়কাল ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত।
সেই পরিকল্পনার
বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। ইতোপূর্বে কর্তৃপক্ষ
ঘোষণা দিয়েছিলো ২০২৬ সালে চালু হতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। তবে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা
দিয়েছে সরকার।
🚏 রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল: কোন পথে চলবে এই বাসগুলো?
প্রথম পর্যায়ে বাসগুলো
চারটি নির্দিষ্ট রুটে চালানো হবে। এরপর ধাপে ধাপে সব মেট্রোপলিটন এলাকাকে
অন্তর্ভুক্ত করে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রুটভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরি করার
পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্ভাব্য রুটসমূহ
(প্রথম পর্যায়):
- গাবতলী – মতিঝিল – কাঁচপুর
- মিরপুর – ফার্মগেট – সায়েদাবাদ –
চিটাগাং রোড
- উত্তরা – বিমানবন্দর – গুলশান –
মহাখালী – বাংলামোটর – শাহবাগ – গুলিস্তান
- মোহাম্মদপুর – শ্যামলী – আসাদগেট
– ধানমন্ডি – নীলক্ষেত – প্রেসক্লাব
প্রতিটি রুটে থাকবে
নির্ধারিত বাস স্টপেজ, গতি নিরীক্ষণ কেন্দ্র, চার্জিং স্টেশন ও অপারেশন ডিপো।
এর ফলে এলোমেলো পার্কিং, যত্রতত্র বাস থামানো, ও অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক
যানচলাচল হ্রাস পাবে।
💳 টিকিটিং সিস্টেম: ডিজিটালেই হবে সব কিছু
এই ইলেকট্রিক বাস
পরিষেবায় থাকবে আধুনিক ডিজিটাল টিকিটিং সিস্টেম। এতে থাকছে:
- প্রিপেইড
স্মার্টকার্ড/ই-পেমেন্ট:
বিকাশ, নগদ, রকেট, কিংবা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কেনা যাবে।
- মোবাইল অ্যাপ: নির্ধারিত অ্যাপের মাধ্যমে
বাসের অবস্থান, সময়সূচি, আসন খালি আছে কিনা এসব জানা যাবে।
- QR কোড স্ক্যানিং: স্টপেজে দাঁড়িয়ে QR স্ক্যান করে
বাসের লাইভ আপডেট দেখা ও টিকিট রিজার্ভ করা যাবে।
- ওয়ান পাস - এক শহর, এক কার্ড: ঢাকার মেট্রোরেলের টিকিট কার্ডও
ব্যবহার করা যাবে এ বাসে (পরিকল্পনায় আছে)।
বিশেষ যাত্রীদের জন্য
ছাড় সুবিধাও রাখা হবে, যেমন:
- শিক্ষার্থী
- প্রতিবন্ধী নাগরিক
- বয়োজ্যেষ্ঠ
⚡ চার্জিং ও অবকাঠামো: কোথায় থাকবে শক্তি কেন্দ্র?
বাসগুলো চালানোর জন্য
থাকবে তিনটি মেগা চার্জিং ও ডিপো সেন্টার:
- পূর্বাচল – পূর্বাঞ্চলীয় রুট কভার করবে
- ঝিলমিল – দক্ষিণাঞ্চলীয় যাত্রীদের জন্য
- কাঁচপুর – পূর্ব গেইট এবং নারায়ণগঞ্জ
সংযোগ
প্রতিটি চার্জিং
স্টেশনে থাকবে:
- ফাস্ট চার্জার (৪০–৬০ মিনিটে ফুল চার্জ)
- শেডিং সুবিধা
- ড্রাইভার বিশ্রাম কেন্দ্র
- বাস রক্ষণাবেক্ষণ গ্যারেজ
🌿 পরিবেশগত সুফল: কার্বনমুক্ত রাজধানীর পথে
এই প্রকল্পের মাধ্যমে:
- বছরে প্রায় ৫০,০০০ টন কার্বন
ডাই-অক্সাইড নির্গমন রোধ হবে
- ডিজেল বাসের বিকট শব্দ দূর হবে
- নগরবাসী পাবে স্বাস্থ্যকর ও
ঝুঁকিহীন যাত্রা
- বৈদ্যুতিক বাসে অপারেটিং খরচ
৬০–৭০% কম হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে সরকারী ব্যয় হ্রাস পাবে
⚠️ চ্যালেঞ্জ ও সতর্কতা: যাতে স্বপ্ন না ভেঙে পড়ে
যদিও প্রকল্পটি অনেক
আশাব্যঞ্জক, তবে বাস্তবায়নের পথে কিছু ঝুঁকিও আছে—
চ্যালেঞ্জ |
সম্ভাব্য
প্রতিকার |
মালিক সমিতির প্রতিরোধ |
অংশীদারিত্ব ভিত্তিক মডেল প্রণয়ন |
বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়ম |
আলাদা সাবস্টেশন তৈরি |
ড্রাইভার প্রশিক্ষণ ঘাটতি |
দক্ষতা উন্নয়ন স্কুল ও নিরীক্ষা |
টিকিটিং দুর্নীতি |
সব লেনদেন ক্যাশলেস ও ট্র্যাকেবল
করা |
🔚 উপসংহার: ঢাকার রূপান্তরের প্রথম ধাপ
ঢাকা শহরের যানজট ও
পরিবেশ দূষণ দুটোই দীর্ঘদিনের অসুখ। এই ইলেকট্রিক বাস প্রকল্প সে সমস্যারই আধুনিক
চিকিৎসা হতে পারে। তবে এই চিকিৎসা যেন কার্যকর হয়, তার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক
সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ও নাগরিক সচেতনতা।
প্রকল্প সফল হলে এটি
হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পূর্ণাঙ্গ রুটভিত্তিক ইলেকট্রিক বাস মডেল—যেটি
শুধু রাজধানীকে বদলে দেবে না, বদলে দিতে পারে গোটা দেশকে।
🔗 সূত্র:
-
Dhaka Tribune, ২০২৫
-
Bangla Tribune, জুন ২০২৫
-
পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর ঘোষণা
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/952e71ca61bf
https://www.webbangladesh.com/news/electric-bus-project-dhaka-2500-crore
Post a Comment