![]() |
প্রতীকী ছবি |
বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরাও কীভাবে সামরিক আইনের আওতায় বিচারযোগ্য হন, তা জানতে
পড়ুন সেনা আইনের ধারা ৩৩-এর বিশ্লেষণ:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঠামো শুধু অস্ত্রধারীদের দ্বারা
নয়, বরং একটি কঠোর শৃঙ্খলা ও আইনি কাঠামোর দ্বারা পরিচালিত হয়। এই কাঠামোর মূল ভিত্তি
হলো "Manual of Bangladesh Military Law", যা প্রতিটি সেনা সদস্যের আচরণ,
দায়িত্ব ও শাস্তির পরিধি নির্ধারণ করে। সামরিক বাহিনী তার নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত
হয় এবং এর জন্য একটি আইন বিভাগ ও এর একজন আইনজ্ঞ আছেন যাকে বলা হয় “জাজ এডভোকেট জেনারেল”।
এই বিভাগকে সংক্ষেপে JAG ডিপার্টমেন্ট বলা হয়। এখানে শুধু সেনা আইনের ধারা ৩৩ নিয়ে
য়ালোচনা করবো।
ধারা ৩৩ – আইনানুগ আদেশ অমান্য
এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো সেনাসদস্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
বৈধ আদেশ জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করেন, তাহলে—
· চাকরিতে সক্রিয় অবস্থায়: সর্বোচ্চ ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড
· অবসরে (অথবা চাকরিতে না থাকলেও আইন প্রযোজ্য হলে): সর্বোচ্চ ৫ বছর
সশ্রম কারাদণ্ড।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা বোঝায়—সেনাবাহিনীর প্রতি আনুগত্য কেবল চাকরির সীমায় আবদ্ধ নয়।
আইনের
পূর্ণরূপ
আইনানুগ
আদেশ অমান্য করা ধারা ৩৩।
(১)
এই আইনের অধীন কোন ব্যক্তি যদি এমনভাবে অমান্য করে যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে কর্তৃত্বের
অমান্য করা হয়, যার ফলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত আইনানুগ আদেশ, জেনে
বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও, ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করা হয়, তাহলে সামরিক আদালত
কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হলে, চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা এই আইনে উল্লেখিত
কম শাস্তিতে দণ্ডিত হতে পারেন।
(২)
এই আইনের অধীন কোন ব্যক্তি যদি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইনানুগ আদেশ অমান্য করে, তবে
তাকে সামরিক আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হলে, যদি তিনি সক্রিয় চাকরিতে এই ধরণের অপরাধ
করেন, তাহলে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা এই আইনে উল্লেখিত কম শাস্তিতে
দণ্ডিত হতে পারেন; এবং যদি তিনি সক্রিয় চাকরিতে না থাকা অবস্থায় এই ধরণের অপরাধ করেন,
তাহলে তাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা এই আইনে উল্লেখিত কম শাস্তিতে দণ্ডিত
হতে পারেন।
অবসরপ্রাপ্তরাও কেন বিচারযোগ্য?
সেনাবাহিনীকে একটি পেশা হিসেবে নয়, বরং একটি জীবনব্যাপী
শপথের দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয়। অবসরে গেলেও তাকে দেশের প্রয়োজনে যে কোনো মুহুর্তে ডাকা
হতে পারে। তাই কেউ যদি সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও আদেশ লঙ্ঘন করেন, তবে তিনি বিচারযোগ্য
থাকেন। কারণ এটি শুধু আইনভঙ্গ নয়, বরং বাহিনীর সুনাম ও গোপনীয়তার বিষয় জড়িত।
সমালোচনা ও বিতর্ক
আইনের এই প্রসারিত ব্যাখ্যা নিয়ে নানা মত থাকতে পারে।
কেউ মনে করতে পারেন, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য স্পষ্ট সীমারেখা থাকা উচিত। আবার কেউ মনে
করেন, আইন এমনই কঠোর হওয়া উচিত যাতে বাহিনীর সম্মান রক্ষা পায়।
উপসংহার
Manual of Bangladesh Military Law-এর ধারা ৩৩ প্রমাণ
করে, সেনাবাহিনী শুধু বাহ্যিক শক্তি নয়; এটি শৃঙ্খলা, আদেশ ও দায়িত্বের প্রতীক। অবসরপ্রাপ্ত
হলেও এই আইন যে প্রয়োগযোগ্য হতে পারে, তা অনেকের কাছে বিস্ময়কর হলেও আইনগতভাবে সম্পূর্ণ
বৈধ। তবে এর প্রয়োগ হতে হবে ন্যায়ের আলোকে, যাতে শক্তি আর শৃঙ্খলা একে অপরের পরিপূরক
হয়।
মতামত
ইদানিং দেখা যায় দেশে-বিদেশে
কিছু অবসরপাপ্ত সেনা কর্মকর্তা-সৈনিক সেনাবাহিনীর অনেক গোপনীয় বিষয় নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও
করেন। অনেকে রাজনৈতিক উস্কানীমূলক ও বিতর্কিত বক্তব্য-বিবৃতি বা ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন
যা রাস্ট্রদ্রোহীর পর্যায়েও পরে। এ ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্তদের সতর্ক করতে এবং জনসাধারণের
জ্ঞাতার্থে আইএসপিআর থেকে একটা বিবৃতি প্রকাশ করা উচিৎ বলে মনে করি।
তথ্যসূত্র:
Manual of Bangladesh
Military Law
The
Army Act, 1952 (as amended)
إرسال تعليق