আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
প্রতীকী ছবি |
২০২৫ সালের ১২ মে বাংলাদেশে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে: নোবেল বিজয়ী
মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম
নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তটি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নেওয়া
হয়, যা দলটির সভা, প্রকাশনা, অনলাইন বক্তব্য এবং সমর্থকদের যেকোনো ধরনের সমাবেশ
নিষিদ্ধ করে। এরপর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে, ফলে আগামী জাতীয়
নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দলটির।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ (HRW) তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা একে "স্বেচ্ছাচারী লক্ষ্যবস্তু
নির্ধারণ" এবং "প্রাথমিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন" হিসেবে আখ্যায়িত
করেছে। HRW-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “শেখ হাসিনার
সরকার বিরোধীদের দমন করতে আইন অপব্যবহার করেছিল, কিন্তু এখন ইউনুসের সরকার একই
কৌশল ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মৌলিক স্বাধীনতা হরণ করছে” ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা গণতান্ত্রিক নীতিমালা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর, দলটির বহু নেতা ও কর্মী গ্রেপ্তার হন, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়, এবং অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
আন্তর্জাতিক
প্রতিক্রিয়া
·
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে
চিহ্নিত করেছে। তারা বলেছে, “রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে”।
· আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের ঘটনায় ভারত সরকার এবং পাকিস্তানের ডন পত্রিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই
দলটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং বহু বছর ধরে দেশের
রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের নিষিদ্ধ করা শুধু একটি রাজনৈতিক
দলের ওপর আঘাত নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপরও একটি বড় আঘাত। এই
সিদ্ধান্ত বাতিল করে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক
পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
Post a Comment