ছবিঃ সংগৃহীত |
২০০০ সালের দিকে আসিফ আকবরের একটি গান ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ যুবকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। একশ্রেণীর যুবকদের মুখে মুখে ফিরতো গানটা। সে বিএনপির এক সময়ের মন্ত্রী আকবর হোসেনের ভাতিজা বলে অনেকে মনে করতো, সঠিক কিনা জানিনা। তবে সে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো, যা পুরাপুরি প্রকাশ পেলো ফেসবুক আসার পরে। বেগম জিয়ার আশে পাশেও তাকে দেখা গিয়েছিলো কিছুদিন। একটা লেখায় পড়েছিলাম, একজন সিনিয়র শিল্পী আফসোস করে বলেছেন, সে উগ্র মেজাজের ছিলো এবং ইন্ডাষ্টিতে সিনিয়রদের সম্মান করতো না। কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাকে কোনোদিন অপমান করেনি, বিএনপি নেতা-কর্মীরাই একবার জনসম্মুখে তার পরনের শার্ট ছিঁড়ে দিয়েছিলো। এরপর থেকে তাকে দলীয় মঞ্চে কম দেখা গেলেও ফেসবুকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বিশাল বিশাল পোস্ট দিতো! তারপরও কোনোদিন ছাত্রলীগ-যুবলীগের কাউকে দেখা যায়নি, আসিফ আকবরকে নিয়ে বাজে পোস্ট করতে। বিএনপির রাজনীতি করলেও ভিন্ন মতাবলম্বী কোনো শিল্পীর সাথে কখনো মতানৈক্য হয়েছে বলেও শুনিনি।
ঠিক
একই সময়ে “অঞ্জনা” গানের জন্য মনির খান খুব নাম করেছিলো। গানটা আমারও ভালো লাগতো। মোদ্দা
কথা, মনির খান ভালো গায়। ২০১৪ সালের দিকে আমাকে ফ্রেন্ড রিকয়েষ্ট পাঠিয়েছিলো। আমি
একটু গান পছন্দ করি, মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন গানের কথা পোষ্ট দিতাম। আমার কোনো পোষ্ট
তার নজরে পড়েই হয়তো রিকয়েষ্ট পাঠিয়েছিলো। দেশ বিদেশের অনেক গানের শিল্পী আমার
ফ্রেন্ডলিষ্টে আছে। তার গান পছন্দ করলেও ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় ইনবক্সে কারণ দেখিয়ে
ফ্রেন্ড রিকয়েষ্ট ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে নিয়ে কখনও বাজে পোষ্ট দেইনি বা
বাজে মন্তব্য করিনি।
তারেক জিয়ার অনেক কাছের লোক ছিলো সে। তার ফেসবুক ওয়ালে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার ছবি শোভা পেতো। তবুও বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয় সে। মনোনয়ন না পাওয়ায় মনের দুঃখে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে আকার-ইংগিতে বিএনপির হাই কমান্ডকে কটাক্ষ করে গান বাঁধে সে। শোনা যায় গাজীপুরে বিশাল খামার বাড়ি করেছে সে। শিল্পী হয়ে সরকার বিরোধী রাজনীতি করলেও পেশাগত জীবনে, চাকরিতে বা ব্যবসায় কোন বিষয়ে হয়রানীর শিকার হতে হয়নি। বিগত ১৭ বছরে মনির খানকে কোনোকিছু নিয়ে শঙ্কিত হতে হয়নি।
এই তালিকায় বেবী নাজনীন, ন্যান্সি সহ আরো অনেকে আছে। যারা সবার কাছে গানের জন্য সম্মানীয়। দুয়েকজন ট্রলের শিকার হয়নি এমন না। তবে তা তাদের নিজেদের কথা ও কর্মের কারণে, যা ফেসবুক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বেবী নাজনীনকে আওয়ামী লীগের কাউকে অসম্মান করতে দেখিনি কোনোদিন। যেটুকু অসম্মানিত হয়েছে তা নিজ দল থেকেই।
সবচেয়ে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কথাগুলো। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এর সাবেক সভাপতি অভিনেতা আহম্মেদ শরীফ ও তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ডেকে নিয়ে ৩৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেন। আহমেদ শরীফ বিএনপিপন্থী অভিনেতা ছিলেন এবং ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন বা পেয়েছিলেন। তবুও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী তাকে বিমুখ করেননি।
বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কথা। আজীবন বিএনপির রাজনীতি করা সুরকার ও গীতিকার শ্রদ্ধেয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারও জাসাসের সভাপতি ছিলেন এক সময়, তাকেও আওয়ামী লীগের সময়ে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আজ (৩০ এপ্রিল) তার মেয়েকে দেখলাম অভিনেতা সিদ্দিককে শারীরিক নির্যাতন ও গ্রেফতার করার কারনে কেঁদে কেঁদে চ্যানেল আইকে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাক্ষাৎকার দিতে।
কিন্তু এখন কি হচ্ছে? আওয়ামীলীগকে সমর্থন করার কারণে রিয়াজ, ফেরদৌস, রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার, সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, সায়মন, শাওন, সাজু খাদেম, সিদ্দিক, শাহরিয়ার নাজিম জয় প্রমুখ শিল্পীরা আজ ‘ফ্যাসিবাদের’ দালাল, আওয়ামীলীগের দালাল! সিদ্দিক তো এমন বড় কোনো নেতা না। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন নেতার আমন্ত্রনে স্টেজে উপস্থিত হতো। এমন সব রাজনৈতিক দলের নেতাই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকদের ডেকে নেয় জনসভায় লোকের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। তারেক জিয়াও শিল্পী মমতাজকে আমন্ত্রণ করে নিতেন তার অনুষ্ঠানে।
সিদ্দিকের সাথে যে আচরণ করা হলো তা খুবই দুকঃখজনক! মব কালচার এখনও দমিত হচ্ছে না, অনাচার দূর হচ্ছে না, আভ্যন্তরিন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী, মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকা প্রথম কাতারে যাদের থাকার কথা সেই পুলিশ বাহিনী নিস্ক্রিয় প্রায়। তারা এখন চাকরি বাঁচাতে স্রেফ ‘ডিউটি’ করে, কাজ করে না। করলে গতকাল প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে হাত বের করে পরনের শাড়ি ধরে একটা মেয়েকে যেভাবে ছেঁচরাতে ছেঁচরাতে নিয়ে গেলো, এমন দৃশ্য স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দূরে থাকুক, স্বাধীনতার আগেও কোনোদিন নজরে পড়েনি। সিদ্দিকের উপর যেভাবে আক্রমণ হয়েছিলো, হয়তো মেরেই ফেলতো তাকে! সে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার গরম দেখিয়ে কখনো কিছু করেছে বলে শুনিনি।
ভোটার কিংবা ভোটার নয়, আওয়ামীলীগকে সমর্থন করে দেশের এক তৃতীয়াংশ নারী-পুরুষ। শিল্পীরা মার্কা মারা দেখে তাদেরকে নাজেহাল হতে হচ্ছে, পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে; বাকি লোকদের কি করবেন? দেশ থেকে বের করে দেবেন?
আজ শিল্পীরা যখন হামলা, মামলার শিকার হচ্ছে, তখন অন্যান্য শিল্পী, সচেতন নাগরিক, সুশীল সমাজ সব মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। আগে হালকা সুড়সুড়িতে নানান বাণী কপচালেও, এখন প্রবল ঝাঁকুনিতেও তাদের চৈতন্যদ্বয় হচ্ছে না!
Post a Comment