বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় মুসলিমরা পিছিয়ে কেনো?

 
মহাকাশের রঙিন ছবি। নাসা ২০২২।

মহান আল্লাহ দুনিয়ার বুকে ইহুদীদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আপনি আমি রাতদিন গালি দিয়ে কি করবো?

 

শুরু করছি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার একটি উক্তি দিয়েঃ

 

"হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে সুখ সম্পদ দান করেছি এবং আমি পৃথিবীর উপর তোমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি - তোমরা তা স্মরণ কর।"

(সূরা বাকারা: আয়াত -১২২)

 

“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনও বসে

 বিবি তালাকের ফতোয়া খূজেছি ফিকাহ ও হাদস চষে”

-কাজী নজরুল ইসলাম

 

 

নিচের লেখাটুকু সংগৃহীতঃ

 

সারা বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা কত জানেন?

১৯০ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৮০ কোটি-এর ২৪ শতাংশ।

এদের মধ্যে কত জন এ যাবতকাল বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছে জানেন?

মাত্র ০৩ জন।

আমি আবার বলছি মাত্র ৩ জন।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানে মোট কতটি নোবেল প্রাইজ ঘোষণা করা হয়েছে?

৬০৯ টি।

সেই হিসেবে শতকরা মুসলিম বিজ্ঞানীদের নোবেল প্রাইজ অর্জনের সংখ্যা দাড়ায় মাত্র ৩÷৬০৯= ০.৫০ শতাংশ।

 

সারা বিশ্বে হিন্দু জনসংখ্যা কত জানেন?

১২০ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ।

এদের মধ্যে কতোজন এ যাবতকাল বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছে জানেন?

মাত্র ০৫ জন (ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই জনকে ধরে)।

সেই হিসেবে এই সংখ্যা দাড়ায় ৫÷৬০৯=০.৮০ শতাংশ।

 

এবার একটু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ইহুদিদের দিকে নজর দেয়া যাক।

সারা বিশ্বে মোট ইহুদিদের সংখ্যা কত জানেন?

মাত্র ১ কোটি ৪৭ লক্ষ।

আমি আবার বলছি মাত্র ১ কোটি ৪৭ লক্ষ।

এদের ভিতরে কতজন বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছে জানেন?

১৫০ জন!!!! যা বিজ্ঞানে ঘোষিত নোবেল প্রাইজের ১৫০÷৬০৯=২৫%!!!!

চিন্তা করা যায়!!! এত ক্ষুদ্র জনসংখ্যার ভিতরে এতোগুলো নোবেল বিজয়ী!!

--এজন্যেই কোরআনের আয়াত দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম।

 

যাইহোক, উপরের সংখ্যাগুলো উল্লেখ করার একটা কারণ আছে।

ফেসবুক খুললেই ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজনদের দেখা যায় ধর্মের ভিতর বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে।

এরা ধুমচায়ে ব্যাখ্যা করতে থাকে, বিজ্ঞানের সব আবিষ্কার ধর্মগ্রন্থ দিয়ে।

 

হিন্দুরা তাদের ধর্মগ্রন্থে বিগ ব্যাঙ খুজে পায়, মহাবিশ্ব সৃষ্টির সব বর্ণনা দেখতে পায়, এমনকি অণু-পরমাণুর জগতেরও নিঃখুত বর্ণনা খুজে পায়।

 

মুসলিমরাও একইভাবে তাদের ধর্মগ্রন্থে বিগ ব্যাঙ খুজে পায়, পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা খুজে পায়, খুজে পায় বিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কারও।

 

বিগ ব্যাং



এদের প্রত্যেকেরই দাবি তাদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞানের সকল আবিষ্কারই নাকি আকার-ইঙ্গিতে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে!!! তারা নিজেরা তা উদ্ধার করতে পারছে না সেজন্য তারা বিজ্ঞানে পিছিয়ে রয়েছে!

হাউ ফানি!!

 

যে ইহুদি বিজ্ঞানী নোবেল প্রাইজ পেয়েছে সে হয়তো জীবনে হিন্দু-মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ খুলেই দেখেনি। অপরদিকে হিন্দু-মুসলিমরা ধর্মগ্রন্থ মুখস্থ করে ফাতাফাতা করার পরেও কোনো নোবেল প্রাইজ ঘরে তুলতে পারছে না!

পারছে না কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে!

 

একসময় মুসলিমরা বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান রেখেছিলো। বীজগনিত

 (মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারিজমী), রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান (ইবনে সিনা), মহাকাশ বিদ্যায় ছিলো তাদের চৌকষ জ্ঞান। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে তাদের সে শিখাটা এখন প্রায় স্থিমিত।

 

এক সময় হিন্দুরা একইভাবে বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান রেখেছিল। জিরো-এর ধারণা, দশমিক সংখ্যার প্রবর্তন, বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি, ফিবোনচি সংখ্যার ধারণা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান শাখাতেও ছিলো তাদের ব্যাপক অবদান। দুঃখের বিষয় হিন্দুদের সে শাখাটা সময়ের সাথে সাথে যতোটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, ততোটা এগোয়নি।

 

বাংলাদেশে ইদানিং কতগুলো ভুইফোড় লেখকের উত্থান ঘটেছে, যারা বিজ্ঞানকে ধর্মের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় প্রবলভাবে লিপ্ত। এরা বিগ ব্যাং’কে ব্যাখ্যা করে ধর্মের আলোকে, এরা ব্ল্যাকহোলকে ব্যাখ্যা করে ধর্মের মাধ্যমে। চিন্তা করা যায়!!

 

একটা জাতিকে কীভাবে হাজার বছর পিছিয়ে দেয়া যায়, এর চেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ আর হতে পারে না। এইসব লেখক পাবলিককে বলদ বানিয়ে নিজের পকেট পুরছে, আর পাবলিক তাদের টোকাই ওষুধ খেয়ে কাল্পনিক সুখ ভোগের আশায় আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। এরা অগোচরে ফিউচার জেনারেশনের যে কী পরিমাণ ক্ষতি করে চলেছে, তা এখন বুঝতে না পারলেও জাতি ঠিকই পরে টের পাবে।

 

সভ্যতা এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার, উন্নত দেশসমূহ মঙ্গলে মহাশূন্যযান পাঠাচ্ছে। অথচ আমরা পড়ে আছি সেই চিরাচরিত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস আর কুযুক্তি নিয়ে।

নিত্য নতুন ফন্দি আটছি কীভাবে নারীকে ঘরে বন্দী করা যায়!

--এজন্যেই কাজী নজরুলের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েছি।

 

কোনো জাতি যদি সারা জীবন পরনির্ভরশীল ও অন্যের গোলাম হয়ে থাকতে চায় এবং সে নিমিত্তে নিজের জন্য নিজেই গর্ত খোঁড়ে, তার দায়ভার তো আর অন্যের উপর চাপানো যায় না!


Post a Comment

أحدث أقدم