জন্মাষ্টমী: শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব, দর্শন ও আজকের প্রাসঙ্গিকতা

 

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)


জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ একটি নিবন্ধ

বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে জন্মাষ্টমী একটি বিশেষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এটি শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি হিসেবে পালিত হয়, যিনি হিন্দু ধর্মের অবতার এবং ভক্তিমূলক সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ভাদ্র মাসের অষ্টমী তিথিতে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, আর সেই থেকেই নাম জন্মাষ্টমী।


শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব
ধর্মীয় আখ্যান অনুসারে, যখন পৃথিবী অন্যায়, অশান্তি ও অধর্মে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, তখন ধার্মিকদের রক্ষা ও অন্যায়কারীদের বিনাশের জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। গীতায় তিনি নিজেই বলেছেন—

“যখনই ধর্মের হানি ও অধর্মের প্রাবল্য ঘটে, তখনই আমি আবির্ভূত হই”

তাই জন্মাষ্টমী শুধু একটি জন্মদিন নয়; এটি এক নৈতিক দিকনির্দেশনার প্রতীক।


উৎসবের তাৎপর্য
এই দিনে ভক্তরা উপবাস, নামসংকীর্তন, পূজা ও নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। মন্দিরগুলোতে শোভাযাত্রা, গীতিনৃত্য, ধর্মীয় আলোচনা ও কীর্তনের আয়োজন হয়। বাংলাদেশে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে বিশাল শোভাযাত্রা ও সমবেত প্রার্থনা হয়।


দর্শন ও শিক্ষা
শ্রীকৃষ্ণের জীবনদর্শন কেবল ধর্মীয় আচারেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তিনি নৈতিকতা, কর্তব্য ও ভক্তির এক অনন্য সমন্বয়। ভগবদ্‌গীতায় তিনি কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের সমন্বিত শিক্ষা দিয়ে মানবজীবনের পথনির্দেশ করেছেন। বিশেষ করে ‘নিষ্কাম কর্ম’—অর্থাৎ ফলের আশা না করে কর্তব্য পালন—আজও মানুষের জন্য গভীর অনুপ্রেরণার উৎস।


সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
জন্মাষ্টমী শুধু হিন্দু সমাজেই নয়, বহুধর্মীয় সমাজেও একটি সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র। এই উৎসব ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা ও শান্তির বার্তা দেয়। শ্রীকৃষ্ণ যেমন তাঁর জীবন দিয়ে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, আজকের সমাজেও তাঁর সেই শিক্ষা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।


উপসংহার
জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব হলেও, এটি ন্যায়, প্রেম, কর্তব্য ও মানবিকতার উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে অন্ধকার যতই ঘনীভূত হোক না কেন, আলো আসবেই। তাই জন্মাষ্টমীর শিক্ষা হতে পারে আমাদের সমাজ ও জীবনের পথপ্রদর্শক।

Post a Comment

أحدث أقدم