হোটেলের নাম: মগের মুল্লুক


প্রতীকী ছবি


"ভাই, পাশেই একটা হোটেল আছে, খাবেন নাকি?"
"কী নাম হোটেলের?"
"মগের মুল্লুক!"
— এই কথোপকথনটা শুনেই আপনি হয়তো একটু থমকে যাবেন। 'মগের মুল্লুক' মানে তো… মানে, যেখানে নিয়ম-কানুনের বালাই নেই, যার যা খুশি তাই চলে!

কিন্তু এখানেই চমক। হোটেলের নাম ‘মগের মুল্লুক’, অথচ ভিতরে ঢুকলেই বোঝা যায়—ব্যাপারটা ঠিক উল্টো।


কেন এই নাম?

হোটেলের মালিক হাসতে হাসতে বলেন,

 

“মানুষের আকর্ষণ করার জন্যই এমন নাম দিয়েছি। তবে যারা আসে, তারা থাকে চমকে—কারণ এখানে নিয়ম ভাঙা নয়, বরং নিয়ম মানার কড়া সংস্কৃতি!”

নামটা যেন একধরনের ব্যঙ্গ, এই সময়ের ‘নিয়মহীন’ সমাজের প্রতিচ্ছবি। আমরা এমন এক দেশে বাস করি যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানই মগের মুল্লুকের মতো চলে—বিচারহীনতা, দুর্নীতি, চাটুকারিতা আর দলীয়করণ যেন অদৃশ্য নিয়ম। কিন্তু এই হোটেল ঠিক এর উল্টো; নামটা মজা করে রেখেছে, কিন্তু বাস্তবে চলছে শৃঙ্খলা আর সততার ঘরে।


ভেতরে কী আছে?

হোটেলের পরিবেশ ঝকঝকে।

  • ভাত, ভর্তা, মাছ, মাংস সবই খাঁটি—প্লাস্টিক-ফুড নয়।

  • খাবারের দাম বোর্ডে লেখা, কারও মুখের ওপর নির্ভর করে বাড়ে না।

  • কাউন্টারে কম্পিউটার বিল, কোনো লুকোচুরি নয়।

  • খাবার ফেলার নিয়ম, প্লেট রাখার নিয়ম—সবকিছুতেই রয়েছে একরকম ‘ডিসিপ্লিন’।

বিরিয়ানির গন্ধে আর ভাজা পিয়াজুর আওয়াজে হোটেল জুড়ে একরকম প্রাণচাঞ্চল্য।
তবে সবচাইতে বড় চমক—হোটেলের দেয়ালে লেখা এক লাইন:
"এখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা নিষিদ্ধ।"


স্যাটায়ার নাকি প্রতিবাদ?

‘মগের মুল্লুক’ নামটা যেমন একরকম মজা, তেমনি একরকম প্রতিবাদ।
এটা সেইসব জায়গার বিপরীত—যেখানে ক্ষমতার জোরে অন্যায় চলে, যেখানে সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ থাকে, অথচ ভিআইপিদের জন্য সব ছাড়। হোটেলটি যেন বলে,

“আমাদের মুল্লুক নয়, নিয়মের মুল্লুক চাই!”


পাঠকের জন্য প্রশ্ন

আপনি যদি সত্যিকার অর্থে একটি ‘মগের মুল্লুক’ দেখতে চান—তবে দুই রকম জায়গা ঘুরে দেখুন:
১. একটি রাজনৈতিক অফিস
২. আরেকটি—এই হোটেল ‘মগের মুল্লুক’

তফাৎটা নিজেই বুঝবেন।

--------------------

এতোক্ষণ ভাবছিলেন ঠাট্টা করছি? না, আসলেই "মগের মুল্লুক হোটেল" নামে সত্যিই একটা হোটেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। আসুন জেনে নেই এর অবস্থান ও অন্যান্য বিষয়।


“মগের মুল্লুক হোটেল”: ঝিনাইদহের একটি অনন্য নাম!

ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের আমতলা এলাকায় নামেই সাড়া ফেলে দিয়েছে ‘মগের মুল্লুক’ নামের এই হোটেলটি। বাংলা কথায় ব্যবহৃত ‘মগের মুল্লুক’ বাক্যটি অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ‘যা খুশি তাই চলে’। আশ্চর্যের বিষয়—একটি হোটেল নাম হিসেবে এটি গ্রহণ করেও ভিতর থেকে সেখানে যেন একরকম স্বচ্ছতা আর শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়। Facebook+9One News BD+9YouTube+9।


সিজলিং মেনু: স্বাদ আর সস্তা মানের মিলন

হোটেলটি বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে, প্রতিদিন ১০–১৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয়। হালিম, খিচুড়ি, নেহারি, গরুর মাংস ও লুচি–আলুর দমের মতো ঘরোয়া খাবারগুলো কম দামে সরবরাহ করা হয়—এমনকি খিচুড়ির দাম মাত্র ১২০ টাকা কেজিতে, আর গরুর মাংস ১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় One News BD


অতিথিদের প্রতিক্রিয়া

কয়েকটি মন্তব্য তুলে ধরা যাক:

“অন্যান্য হোটেলের থেকে এখানে রান্নাও ভালো, নামটাও ব্যতিক্রম।”
“হালিম খেলাম—এককথায় অসাধারণ স্বাদ।”
“মান বজায় রেখে এত কম টাকায় খাবার পাওয়া দুস্কর।”
— সকলে এ হোটেলের স্বাদ ও সার্ভিসে মুগ্ধ One News BD


মালিকের বক্তব্য: লক্ষ্য অরাজকতায় বিরোধিতা

মালিক রোকন শেখ বলেন, নামটিকে “ব্যঙ্গাত্মক” রাখা হয়েছে—কারণ অনেক হোটেলে খাওয়ার আগে এবং পরে দাম পরিবর্তন করে ভোক্তাদের সাথে অন্যায় আচরণ করা হয়। এ ধরনের অরাজকতা বোঝাতে তিনি নিজ হোটেলকে “মগের মুল্লুক” নাম দিয়েছেন, এবং বাস্তবে তাতে মান বজায় রাখার চেষ্টা করেন TikTok+8One News BD+8YouTube+8


অবস্থান ও পরিচিতি

এই হোটেলটি অবস্থিত রাস্তার পাশে—ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের আমতলা এলাকায়, যা দ্রুত জনঘন এলাকায় মানুষের নজরে এসেছে। নামের কারণেই এটি ভাইরাল হয়ে উঠেছে—মানবদেহের চোখ আকর্ষিত করেছে এই অদ্ভুত, মজার নাম Facebook+1One News BD+1


পরিশেষে

একটা হোটেলের নাম শুধু নাম নয়। তা হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের ভাষা, ব্যঙ্গের ছায়া, কিংবা শুদ্ধতার প্রতীক। ‘মগের মুল্লুক’ হোটেল নামটা হয়তো কানে লাগবে আজব, কিন্তু এর ভেতরের বাস্তবতা অনেক কিছু শেখায়—কীভাবে শৃঙ্খলা দিয়ে শুরু হয় পরিবর্তন।

খেয়াল করুন, অনেক সময় নাম নয়—মর্মটাই আসল।

ভিডিওঃ  'কালবেলা'র সৌজন্যে 


আরও পড়ুনঃ  (১)  এক বধূ, দুই বর

                        (২)  একসাথে ৯ সন্তানের জন্ম দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান

Post a Comment

أحدث أقدم