আওয়ামী লীগের জন্মদিনে আলি শরিয়তির মূল্যায়ন-




'আওয়ামী লীগ থাকলে, বাংলাদেশ থাকবে" 

লেখা: @Sabbir Khan

ভূমিকাঃ

আজ ২৩ জুন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু আজ অব্দি নেতৃত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া জাতীয় নেতাদের এবং অগণিত মুক্তিকামী কর্মী ও সমর্থকদের, যারা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। আজকের এই বিশেষ দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আওয়ামী লীগের স্বপ্নদ্রষ্টা হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী, প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মওলানা হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জননেতা শামছুল হক ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এবং সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। অন্তিম অভিবাদন জানাই জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীবৃন্দকে৷


প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটঃ

আজ থেকে ৭৬ বছর আগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বাঙালির মুক্তির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক (ইতিপূর্বে ভারপ্রাপ্ত ছিলেন) হিসেবে নির্বাচিত হবার পর আওয়ামী লীগ অপ্রতিরোধ্য গতি লাভ করে। এসময় থেকে আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবেও বিস্তৃত হয়। তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ত্বকে অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের হাতেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে। এছাড়া গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্য সামনে রেখে স্বদেশি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাও হয়ে উঠে আওয়ামী লীগের অন্যতম মূলনীতি। যা স্বাধীনতার পরে বাস্তবায়ন হতেও শুরু করেছিল।


পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষার দেশ পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই কয়েকজন জাতীয়তাবাদী তরুণ  রাজনীতিক, যারা পাকিস্তান আন্দোলনেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তারা উপলব্ধি করেন- এই বাংলার অধিকার ও গণমানুষের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ আগ্রহী নয়। পূর্ববঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রগতিশীল ধারার এই তরুণরা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের অনুসারী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অন্যতম অনুসারী শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই প্রগতিশীল তরুণদের প্রধান নেতা। আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি ও আরেক তরুণ নেতা শামছুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯৪৯ সালের এই দিনে ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। যেখানে কারাবন্দী অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন। 


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অবিভক্ত বাংলার নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ বোস, কৃষক-জনতার নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখের মিলিত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং ক্ষুদিরাম ও তিতুমীরের অসমাপ্ত বিদ্রোহের সমাপ্ত নায়ক। অপরদিকে ছিলেন মরমী বাউল সম্রাট লালন ফকির, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি এই প্রবাদপ্রতীম রাজনীতিক-বিপ্লবী এবং দার্শনিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতি স্রষ্টাদেরই আকাঙক্ষারই অনুবাদ। যাকে বলা যায় বাঙালির মিলিত আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নই হলো বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগের আদর্শ।


কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অথবা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কিংস পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের অন্যায়ের বিরোধিতা করে। তাই ক্ষমতার বাইরে থাকলে যেমন মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার, ক্ষমতাসীন অবস্থায়ও জনকল্যাণই আওয়ামী লীগের পাথেয়। ৭৬ বছরের প্রাজ্ঞ এই রাজনৈতিক দলের অর্জন অসংখ্য। সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা। এজন্যই বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ সমার্থক। বলাবাহুল্য, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। তাই বলা হয়ে থাকে- বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন এবং অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। ফলে যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, এই মাটি থেকে কেউ আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে পারবে না। বরং এটাই বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ থাকলেই বাংলাদেশ নামক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রটি টিকে থাকবে। 


রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাঃ 

৭৬ বছরের ইতিহাসে বাঙালি জাতির অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে আওয়ামী লীগ অসংখ্য বাধা, ষড়যন্ত্র, হত্যা ও রক্তাক্ত পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে, মানুষের পাশে থেকেছে—সংগ্রামে, দুর্যোগে, ও উন্নয়নের অভিযাত্রায়। 


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার মূলে রয়েছে জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব। জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ এবং সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ বিরোধীদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধ্বংস্তুপ থেকে উঠে এসে স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং উন্নয়নের মহাযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়েছে।


প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগের সাথে এ-জনপদের মানুষের রয়েছে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক।


উন্নয়নের অভিযাত্রাঃ 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, শক্তিশালি অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে আওয়ামী লীগের গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনার ভিত্তিতেই। তাই আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ও সংগ্রামের ইতিহাস। 


এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছিল, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছিল এবং প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে উন্নয়নের নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। বর্তমান বাংলাদেশ একটি ধ্বংসস্তূপ ব্যতিরেকে আর কিছুই নয়। ৫ আগস্টের পরে আরও ব্যাপকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের বিকল্প কেবলই আওয়ামী লীগ। কারণ বাংলাদেশের মা-মাটি ও মানুষের সামগ্রিক উন্নতি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবার অন্য কোনব বিকল্প রাজনৈতিক কিংবা সুশীল শক্তি নেই।


বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকট ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটি অসাংবিধানিক সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ১৯৭১ সালে একই কাজ করেছিল জেনারেল ইয়াহিয়া খান। কিন্তু আওয়ামী লীগ ফিরেছিল নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের অতীত সংগ্রামী ও লড়াইয়ের ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় এবার ফিরবে সকল অপশক্তিকে পরাজিত ও নির্মূল করার মধ্য দিয়ে। কারণ আওয়ামী লীগ শুধু একটি গতানুগতিক রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি চলমান আন্দোলন ও অনুভূতির নাম। বাংলাদেশের তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার কেবল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, তারা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ-ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন করে দেশকে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অতীতের মতো এবারও বাংলাকে রাহুমুক্ত করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। ইতোমধ্যে শত শত নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছে, দলের কয়েক লাখ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, দশ লক্ষাধিক নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এবং বর্ষীয়ান অনেক রাজনীতিবিদ কারাগারে। এরপরেও আওয়ামী লীগকে ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’। বঙ্গবন্ধুর সাহস, ধৈর্য ও বিচক্ষণতার শিক্ষা থেকেই দলের কর্মীরা এই যুদ্ধ জয়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে এবং বিজয়ী হবে।


উইনস্টন চার্চিলের একটি চমৎকার কথা আছে- ‘if we win the big battle in the decisive theater, we can put everything straight afterwards.’ অর্থাৎ, ‘যদি আপনি শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে বড় মঞ্চের কোনো যুদ্ধে জয়ী হতে পারেন তাহলে আগামীর দিনগুলোতে ছোট শত্রুদের নিয়ে আপনার কোনো চিন্তাই করতে হবে না; তারা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।’ একাত্তরে আওয়ামী লীগ চাপিয়ে দেয়া একটি বড় মঞ্চের যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল। এখন আবার আরেকটি বড় মঞ্চের যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এবারও বিজয়ী হবে বলে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের সংগ্রামী কর্মীদের হাত ধরেই বাংলার মানুষ আবারও অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসবে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে অসংখ্য নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ ও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী নেতৃত্ব সবসময় এই দলের কর্মীদের পথ দেখায়। একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয়ী হয়েছিল, আর এবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় ছিনিয়ে আনবে। কেননা, আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেই কেবল বাংলাদেশ বিজয়ী হবে।


অবিকল্প আওয়ামী লীগঃ

৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের বিকল্প কেবলই আওয়ামী লীগ। অন্য কোন রাজনৈতিক দল কিংবা শক্তিই আওয়ামী লীগের বিকল্প নয়। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই, এমনকি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই ভূখণ্ডে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবার বাসনায় অনেক রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোন দলই বিকল্প হতে পারেনি। বরং বেলাশেষে অধিকাংশ দলই বাংলাদেশ-বিরোধী অপশক্তিতে পরিণত। আর অল্প কয়েকটি বনসাই হয়ে গেছে।


আওয়ামী লীগের বিকল্প রাজনৈতিক দল তৈরির প্রথম শক্তিশালী পদক্ষেপ ছিল ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন। ন্যাপ এখন অস্তিত্বহীন। পাকিস্তান আমলেই জাতীয় লীগও গঠিত হয়েছে। এনডিএফ, পিডিএম ইত্যাদি তো হয়েছি। কিন্তু এসব এখন কেবল ইতিহাসের পাতায়, বাস্তবে তাঁদের অর্জন মহাশূন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।


স্বাধীন বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের বিকল্প পার্টি গঠনের চেষ্টা হয়েছে। জাসদ, বিএনপি, বাকশাল(১৯৮৩), জাতীয় পার্টি, নাগরিক শক্তি, প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) ইত্যাদি গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে আলোচিত এনসিপি। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, এই দলগুলো প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের বিকল্প হতে চেয়েছে। কিন্তু বিকল্প দূরের কথা অনেকেই হারিয়ে গেছে, বাকীরা বাংলাদেশ-বিরোধী অপশক্তিতে পরিণত হয়েছে।


এক অর্থে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)কেও এই তালিকাভুক্ত করা যায়। কিন্তু সিপিবি আজ অব্দি গণমানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।


বাংলাদেশ রাজনৈতিক দলসমূহ ও রাজনীতির অনিবার্য পরিণত ও বাস্তবতা হলো কবি শামসুর রাহমানের ‘এখনও দাঁড়িয়ে আছি, এ আমার এক ধরনের অহংকার’ শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক। অন্যদের জন্যও শামসুর রাহমান একই কবিতায় লিখেছেন, ‘বেজায় টলছে মাথা, পায়ের তলায় মাটি সারাদিনমান/পলায়নপর,/ হাঁ-হাঁ গোরস্থান ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি না’।


এই ভূখণ্ডের দলীয় রাজনীতির ব্যবচ্ছেদ করলে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়- আওয়ামী লীগ ছাড়া সকলেই বিভাজনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং অনেকেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। অপরদিকে একমাত্র আওয়ামী লীগ অবিভাজিত ও জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করেছে। শুধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠা নয়, বাংলাদেশ মা ও মাটির, প্রাণ ও প্রকৃতির উন্নতির লক্ষে কাজ করে গেছে। যা অন্যদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। দীর্ঘ ৫৪ বছরে একাধিকবার আওয়ামী লীগের বিকল্প তৈরির চেষ্টা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও হয়েছে, কিন্তু তা সফল হয়নি। জনগণই বারবার আওয়ামী লীগকে গ্রহণ করেছে। ফলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াই স্বাভাবিক যে, আওয়ামী লীগের বিকল্প একমাত্র আওয়ামী লীগ।  


শেষকথাঃ

একাত্তরে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। পঁচাত্তরের নভেম্বরে জাতীয় চারনেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতিকে হত্যার চেষ্টা করেছে এবং ১/১১ সময়কালে রাজনীতি থেকে মাইনাসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এবারও ব্যর্থ হবে। গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লিগের অবস্থান বাংলার কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। এ-দেশে মানুষ জেনে গেছে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশ হারিয়ে যাবে।


৭৬ বছরের প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের জন্য শুভকামনা নিরন্তর!


লেখা: #Sabbir Khan


Post a Comment

أحدث أقدم