একুশে পদক প্রাপ্ত সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক

 
একুশে পদক প্রাপ্ত জিয়াউল হক


ভদ্রলোক পেলেন একুশে পদক। তাকে দেখতে অনেকে তার বাড়িতে যাচ্ছে। কিন্তু সকাল থেকে তিনি বাড়িতে নেই। ঘরে চাল কেনার টাকা না থাকায় দই ও ক্ষীর বিক্রি করতে বের হয়েছেন। ৯০ বছরের বৃদ্ধ সাধারণ মানুষটার একুশে পদক পাওয়ার কারণ কী?

ভদ্রলোক নিজের নামে একটা পাঠাগার গড়েছেন ১৯৬৯ সালে। সময়ের পরিক্রমায় তার পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১৪০০০! পাঠাগারে পাঠ্যবই বাদেও অনেক গল্প, উপন্যাস, বিভিন্ন প্রবন্ধের বই রয়েছে। তিনি বলেছেন, “শুধু পাঠ্যবই পড়ে ছাত্রদের জ্ঞান অর্জন হবে না মনে করেই আমি নিজের নামে সাধারণ পাঠাগার স্থাপন করেছি।“ কী সুন্দর চিন্তাভাবনা! অথচ কত শিক্ষিত পরিবারেও পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই হাতে নিলে মারপিট খাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। 

ভদ্রলোকের নাম জিয়াউল হক। পেশায় দই বিক্রেতা। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে দই বিক্রি করেন তিনি। সেইসাথে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন সবাইকে।

১৯৫৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর টাকার অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। পরবর্তীতে তার হাতে টাকা জমলেই তিনি গরীব ছাত্রছাত্রীদের বই কেনার ব্যবস্থা করে দিতেন। এভাবে অসংখ্য মানুষ তার নিকট থেকে উপকৃত হয়েছে। তার দেওয়া বই পেয়ে অনেকে অনার্স মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

অনেক অসহায় নারীকে তিনি বাড়ি পর্যন্ত করে দিয়েছেন। অথচ এই ৯০ বছর বয়সেও তাকে জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হয়। এমন মানুষও দুনিয়ায় আছে ভাবা যায়!!

জিয়াউল হকের মতোএরকম মানুষ শত বছরে হাতে গোণা দু'চারজন জন্মগ্রহণ করে। এঁরা দেশের গর্ব, দেশের সম্পদ। এমন একজন মানুষ একুশে পদক পাওয়ায় পুরো জাতি খুশি না হয়ে পারে না। ভাবতে ভালো লাগলো, এখনো আমরা সঠিক মানুষকে খুঁজে  বের করে তার মূল্যায়ন করতে পারি।
যোগ্য ব্যক্তির উপযুক্ত পুরস্কারে ভূষিত করায় মনটা ভরে গেলো। 
জিয়াউল হকের প্রতি রইলো অকুন্ঠ শ্রদ্ধা। 

Post a Comment

أحدث أقدم