![]() |
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 🖤 |
“বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়—১৫ই আগস্ট ১৯৭৫।”
আগস্ট মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক শোকাবহ মাস। প্রতিটি বছর এই মাস এলে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার প্রিয়তম নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এক নৃশংস সেনা অভ্যুত্থানে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ শহীদ হন।
ইতিহাসের নির্মম ট্র্যাজেডি
১৯৭৫ সালের সেই ভোররাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি রূপ নেয় রক্তাক্ত এক হত্যাযজ্ঞে। ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নয়, বরং একটি আদর্শ, একটি চেতনা, একটি সংগ্রামী জাতির ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন নির্মমভাবে প্রাণ হারান তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ পরিবারের অনেক সদস্য।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করে তোলে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ একটি গভীর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়েছিল।
আগস্ট কেন ‘শোকাবহ’?
এই মাসে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাই নয়, পরবর্তী সময়ে বহু ষড়যন্ত্র এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে প্রণীত হয় ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ। এর ফলে দীর্ঘকাল এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যত বন্ধ ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রের উচ্চপর্যায়েও দেখা দেয় চরম বিভাজন ও সামরিক হস্তক্ষেপ। দেশ হারিয়ে ফেলে তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল ধারা।
এ ছাড়াও ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশে বক্তৃতারত ও অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তাতে শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলে ২৪ জন নিহত ও বহু লোক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে। সেটাও এই আগষ্ট মাসেরই ২১ তারিখে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অনেক গবেষক মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কেবল কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ ছিল না। বরং, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত অভ্যুত্থান—যার পেছনে ছিল আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মদদ। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের নেতৃত্বকে নির্মূল করে তাকে একটি নতজানু রাষ্ট্রে রূপান্তর করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
আজকের প্রজন্মের দায়িত্ব
শোকের এই মাসে আমাদের করণীয় কেবল চোখের জল ফেলা নয়, বরং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে গড়ে তোলা। ১৫ই আগস্ট শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, এটি একটি জাতির আত্মবেদনাময় অধ্যায়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে বয়ে চলেছে।
আজকের প্রজন্মকে জানতে হবে কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল, কারা করেছিল, কেন তাদের বিচার বিলম্বিত হয়েছিল এবং কীভাবে সেই বিচার কার্যকর করা হয়েছিল। একইসঙ্গে, প্রয়োজন রাষ্ট্রের সবস্তরে জবাবদিহিতা, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।
শেষ কথা
জাতির এই ক্রান্শোতিলগ্নে কাবহ আগস্ট যেন আমাদের কাছে শুধু শোকের মাস না হয়—এটি হোক আত্মবিশ্লেষণ, আত্মসমালোচনা ও আত্মপ্রতিশ্রুতির মাস। জাতির জনকের রক্ত যেন বৃথা না যায়। তাঁর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, উন্নত বাংলাদেশ গঠনে আমরা যেন সবাই এক হয়ে কাজ করি।
“একটি জাতিকে হত্যা করতে হলে তার ইতিহাসকে হত্যা করো। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই ইতিহাসের প্রতীক—তাই তাকে হত্যা করা হয়েছিল।”
The same article in english: Mourning August: A Month of National Grief and Self-Recovery
إرسال تعليق