লোকটা গরিব, আবার হিন্দু!
✍️ রবীন আহসান | 🗓️ ২৫ জুন ২০২৫
ঘটনাস্থল:
লালমনিরহাট, বাংলাদেশ
লোকটা গরিব।
আবার হিন্দু।
এই একটাই পরিচয়—তার জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ!
দেশভাগের সময়ও তার
পরিবার দেশ ছাড়েনি।
একাত্তরে যখন পরিচয় যাচাই হতো লুঙির নিচে তাকিয়ে, তখনও তারা দেশছাড়া হয়নি।
কি এমন আছে এই মাটিতে?—জানেনা কেউ, তবু ওরা রয়ে গেছে।
আজও রয়ে গেছে লোকটা।
একটু ভিটেমাটি, বাজারে ছোট্ট সেলুন দোকান, সেখানেই বাপ-ছেলে মিলে বছরের পর বছর ধরে
চুল কাটে।
হিন্দু-মুসলমান সবাই আসে সেখানে—গল্প হয়, হাসি হয়।
এইটুকুই তাদের জীবন।
না, কোনো বড় স্বপ্ন নেই ওদের।
বাঁচার মত করে বেঁচে থাকার স্বপ্নটাই যথেষ্ট তাদের জন্য।
অনেকে গেছে—ভিটেমাটি
বেচে চলে গেছে ভারত, কানাডা, আমেরিকা।
এই লোকটা যায়নি।
চুল কেটে যা আয়, তাই দিয়ে চলে যায়।
খায়, ঘুমায়, কাটায়।
এই মাটিতেই ওর সব।
তারপর?
একদিন কয়েকজন অল্প
বয়সী মুসলিম কাস্টমার চুল কাটাতে এলো।
চুল কাটতে কাটতেই শুরু করল ধর্মের জ্ঞান দেওয়া।
সাবধানে শুনছিলেন বাপ-ছেলে।
একটা-দুটো প্রশ্ন করলেনও—জবাব মেলেনি।
বরং পাল্টা এল অভিযোগ—ধর্ম অবমাননা!
দল বেঁধে জটলা, গুজব রটনা, তারপর মব জাস্টিস!
চুল কাটানোর টাকা কম দেয়ার ঘটনাকে টুইস্ট করে বানানো হলো অবমাননার গল্প।
লোকটা ভাবতেও পারেনি—একই পাড়ার মানুষ, যাদের চুল কাটে দিনের পর দিন, তারা একদিন
এমন করবে।
বাপ-ছেলেকে একসাথে
মারধর করা হলো।
কেউ একজন বুটজুতো পরা পা তুলে বৃদ্ধ লোকটার পাঁজরে মারল লাথি—সেই লোকটি মাথায়
টুপি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি।
ধর্মের পোশাক পরে কেউ এভাবে অন্য ধর্মাবলম্বী এক বৃদ্ধকে মারে?
লোকটা মরেনি—এটাও
অলৌকিক।
কিন্তু এখন সে ও তার ছেলে লালমনিরহাটের জেলখানায় বন্দি।
অভিযোগ: ধর্ম অবমাননা!
না, কোনো প্রমাণ নেই।
না, কেউ তদন্ত করেনি।
শুধু একটা পরিচয়ই যথেষ্ট ছিল—
লোকটা গরিব।
আর হ্যাঁ, সে হিন্দু!
শেষ
কথা:
এই ঘটনাটি শুধু একজন
লোকের গল্প নয়, এটি এই দেশের বিবেকের আয়না।
সেই আয়নায় আজ প্রশ্ন রাখি—
আমরা কি এখনও মানুষ?
নাকি পরিচয়ের ধর্ম আর আর্থিক অবস্থা দিয়েই মানুষ চিনে নিই?
লেখকের
অনুরোধ:
এই লেখাটি শেয়ার করুন, যাতে অন্য কেউ অন্তত প্রশ্ন তো করে—এই সমাজটা কোনদিকে
যাচ্ছে?
মারধরের ভিডিও
মূল লেখাঃ রবীন আহসান
সম্পাদনা: আতাউর রহমান খান
সেই নরসুন্দর পরিবার চাইছে নিরাপত্তা
আরও পড়ুনঃ
Post a Comment